হারিয়ে যাচ্ছে পান্ডা ।। Panda Getting Extinct


কারো কারো শখ থাকে ঘরের মধ্যে পোষা পাখি, প্রাণী রাখার। সেটা একটা শখও নাকি! হাতের কাছে খরগোশ থেকে শুরু করে তুলতুলে ছোট্ট কুকুর কিংবা ময়না পাখি বা টিয়েও কেউ কেউ পায়। কিন্তু পাণ্ডা পাওয়া! বলা যায় এক্কেবারেই অসম্ভব। কারণ পাণ্ডা পৃথিবীতে আছেই মাত্র হাতে গোনা যায় এমন সংখ্যায়! তাও আবার অধিকাংশরই বাড়ি হচ্ছে সেই সুদূর চীনে। সেদিন আবার পান্ডাদের নিয়ে হঠাৎ করেই একটা মনখারাপ করা খবর শোনা হলো।

পৃথিবীময় যে বিভিন্ন প্রাণীরা দিনে দিনে বিলুপ্ত বা নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে; তাদের সঙ্গে নাকি চীন দেশের এই পান্ডারাও যোগ দিয়েছে। বিজ্ঞানীরাই জানিয়েছেন একথা। এমনতরো অবস্থা চলতে থাকলে নাকি আর মাত্র ২-৩ প্রজন্ম পরেই এই তুলতুলে, অসাধারণ কোমল সুন্দর প্রাণীটিকে পৃথিবীতে আর দেখা যাবে না। কী ভয়ঙ্কর কথা, একবার ভাবেন দেখি!


আচ্ছা, যদি বিলুপ্ত হয়েই যায়! তাহলে! একটা কাজ করা যায়, সবার কাছে পাণ্ডাদের বাঁচানোর জন্য আলাপ আলোচনা তো করতে পারি আমরা কী বলেন!

চলেন আজ তাই করি। পান্ডাদের নিয়ে যা যা জেনেছি, আপনাদের সঙ্গে আজ তাই নিয়েই খানিক গল্প করি তাহলে। পান্ডা সম্পর্কে বিশদ তথ্য গুলো জেনে নিতে তো কোনো সমস্যা নেই। বরং ভালোই হলো। আর যদি কোনো চীনে বন্ধু মিলে যায় তাহলে এই তথ্য গুলোর সঙ্গে তার কাছ থেকেও কিছু গল্প কথা জেনে নিবেন পাণ্ডাদের সম্পর্কে!

এরা কোথায় থাকে জানেন তো? সেই সুদূর চীন দেশে। চীনের সিচুয়ান, সানজি আর গানসু প্রদেশের যে বড়ো বড়ো ফার গাছ আর বাঁশের বন আছে, সেখানেই এদের বসবাস। তাও আবার কি, এমন বনের সংখ্যা এখন মোটে ৬টি। প্রকৃতিতে হাজার খানেক আর চিড়িয়াখানা ও প্রজনন কেন্দ্র মিলিয়ে আরো ১৫০ টার মতো। এই হচ্ছে বর্তমানের পান্ডার সংখ্যা। অথচ পান্ডারা যখন পৃথিবীতে আসে (২-৩ মিলিয়ন বছর আগে), তখন এদেরকে ভিয়েতনাম এমনকি পাশের দেশ মায়ানমারেও পাওয়া যেতো। বেইজিংয়েও এদের একটা বড়ো বসতি ছিলো। আর এখন কমতে কমতে মাত্র ৩টা প্রদেশে এসে ঠেকেছে এদের বসতি।


পান্ডা তো দেখেছেন। এমনিতে চেহারায় প্রায় একটা মিষ্টি ভালুকের মতোও দেখতে, সাদা কালো মিলিয়ে গায়ের রঙ। হাতে, পায়ের থাবা, গায়ের লোম সবকিছুই প্রায় ভালুকের মতোই। কান চোখে পায়ে আর ঘাড়ে কালো লোমের আবরণ থাকে এদের আর দেহের বাকি অংশে থাকে সাদা লোমের আবরণ। পৃথিবীতে এদের সংখ্যা খুব কম হলেও পান্ডা কিন্তু খুব পরিচিত প্রাণী। এমনিতে খুবই শান্ত শিষ্ট। কিন্তু যদি একবার ক্ষেপে যায়, তাহলে কিন্তু পান্ডাও একটা ভালুকের মতোই রেগে গিয়ে আক্রমণ করতে পারে। খানিকটা নাদুস নুদুস, শান্ত শিষ্ট বাচ্চা ছেলেপুলেদের মতো আর কী!

লম্বায় অবশ্য এই পান্ডারা কিন্তু খুব বেশি বড়ো হয়না। দেড় মিটারের মতো (৪-৫ ফুট) লম্বা আর ওজনে প্রায় ৭৫ থেকে ১৩৫ কিলোগ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। আর বনে বসবাসকারী পান্ডারা ১৮ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। চিড়িয়াখানায় থাকলে বেঁচে থাকতে পারে ৩৫ বছরের মতো। এদের মুখের চোয়াল হয় অনেক বড়ো। তা দিয়ে এরা লতা-পাতা আর এদের প্রধান খাবার বাঁশ চিবিয়ে খায়। মানুষের মতোই দুই পায়ে হাঁটতে পারে এরা, আবার গাছেও চড়তে পারে দারুণ!


মোটামুটি ৯৯ ভাগ পান্ডার প্রধান খাবার হলো বাঁশ। তবে ফুল, লতা, পাতা আর মাশরুমও নাকি কেউ কেউ খেয়ে থাকে। তোমরা শুনলে অবাক হবে যে, দিনের ২৪ ঘন্টার মধ্যে একটা পান্ডা প্রায় ১৬ ঘন্টাই খাওয়ার পেছনে ব্যয় করে! পেটুক মহারাজ আর কাকে বলে! অবশ্য খাওয়ার পেছনে সময়টা ওদের দিতেই হবে, কারণ পান্ডা যা খায়, তার মাত্র ২০ ভাগ ও হজম করতে পারে। যেখানে ছাগল হজম করতে পারে ৬০ ভাগ। তারপরও দেখো, ছাগলও সারাক্ষণই খাওয়ার তালে থাকে। তাহলে পান্ডাকে আরো বেশি করে খেতে হবেনা?

খাওয়ার সময়টুকু বাদ দিয়ে পান্ডা ঘুমিয়েও ওর ‘এনার্জি সেভ’ করে! বাহ্‌, কি মজা পান্ডাদের, কাজের মধ্যে দুই খাই আর শুই!

প্রতিটা পান্ডার শরীরে কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন গন্ধ! আর এই গন্ধের ভিত্তিতেই ওরা পরস্পরকে চিনে নেয়। ওদের তো আর আমাদের মতো নাম নেই কিংবা আলাদা আলাদা দেখতেও নয় কেউ। তাই শরীরের গন্ধই ভরসা। তবে ওরা যে মুখ দিয়ে শব্দ করেনা, ব্যাপারটা তেমন নয় কিন্তু। মোটামুটি ১১ রকমভাবে ওরা ডাকাডাকি করে। কিন্তু কী যে বলে, এটা অবশ্য বিজ্ঞানীরা এখনো বের করতে পারেননি।


পান্ডারা বছরে একবারই বাচ্চা দেয়। আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে বাচ্চা পান্ডারা মা পান্ডা থেকে জন্মগ্রহণ করে। একসঙ্গে দুটো করে বাচ্চা জন্ম নেয়। আর জন্মের সময় এই বাচ্চাগুলোর ওজন কতো থাকে জানো? মাত্র ৯০ থেকে ১৩০ গ্রাম! সাধারণত যে বাচ্চা দুর্বল থাকে, মা পান্ডা ঐ বাচ্চাকে ছেড়ে দিয়ে চলে আসে। আর ঐ ফেলে রেখে চলে আসা দুর্বল বাচ্চাটি সাধারণত কিছুদিন পরে মারাই যায়। ভাবছেন ভাগ্যিস পান্ডা হয়ে জন্মাই নি!

তো জানা গেছে, পান্ডার এই বাচ্চাগুলো ৪৫ দিন পর্যন্ত অন্ধ থাকে, চোখ খুলতেই পারেনা একফোটা। আর তাই দেখতেও পায়না একদম। জন্মের সময় সব পান্ডার গায়ের রঙ থাকে ধবধবে সাদা। ২ সপ্তাহ পর থেকে এদের গায়ে কালো কালো ছোপ ছোপ দাগ লাগা শুরু হয়। ৭৫ থেকে ৯০ দিন পর এরা হামাগুড়ি দেওয়া শেখে। বাঁশ খেতে শেখে ৫ মাস পর। দেড় বছর পর্যন্ত এরা তাদের মা’দের সঙ্গেই থাকে। তারপর যার যার মতো করে এরা ঘুরে বেড়ায়। তার আগেই অবশ্য ১ বছরের মাথায় এদের শরীরের ওজন ৩৫ কিলোগ্রাম ছাড়িয়ে যায়।


যাক, পান্ডা কাহিনীর প্রায় শেষ ভাগে চলে এসেছি আমরা। এই মুহুর্তে পান্ডারা পৃথিবীর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ প্রজাতির মধ্যে ২য় অবস্থানে আছে। মেরে কেটে দেড় হাজার পান্ডার হদিসও হয়তো এখন আর পাওয়া যাবেনা। আসলে পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি, ঘর বাড়ি তৈরির জন্য বন কেটে ফেলা, পান্ডাদের খাবার বাঁশ ঝাড়ের বাঁশ নিজেদের কাজে লাগানো, এগুলো মিলেই পান্ডাদের অবস্থা ক্রমশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তার মানে, আমাদের এই অপরিকল্পিত জনসংখ্যার নানান চাপ, প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে প্রকৃতিকে নষ্ট করা, ধ্বংস করা শুধু আমাদের নিজেদেরই ক্ষতি করছিনা, ধ্বংস করে দিচ্ছে পৃথিবীর সুন্দর সুন্দর প্রাণীদেরকেও। চলেন আমরা ওদের পাশে গিয়ে দাঁড়াই। অন্তত ওদের হয়ে কথা বলি যারা ওদের ধ্বংসের পেছনে কাজ করছে তাদের ঠেকাতে। পান্ডারা তো কথাই বলতে পারে না। তাই চলেন ওদের হয়ে আজ কথা বলি আমরাই!

লেখকঃ আশরাফুল ইসলাম সাগর।
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info