নড়ন চড়ন সেতু (২য় খন্ড)

যাহাদের নজরে নড়ন চড়ন সেতু (১ম খন্ড) আসে নাই তাহারা চাইলে দেখিয়া আসিতে পারেন।

যাহাহোক আজ আমরা আলোচনা করিবো নড়ন-চড়ন সেতুর আরো একটি ধরন লইয়া। এই সেতু নাম দিতে পারি, “ভাজ করা সেতু” বা “folding bridge”, আজও কহিয়া রাখিতেছি বাংলা নামের দিকে নজর না দিলেও চলিবে।

নাম শুনিয়াই বুঝিতে পারিতেছেন সেতুগুলি কেমন হইবে। যাহারা বুঝিতে পারিতেছেন না তাহারা নিচের ছবি দুইটিকে অবলোকন করিতে পারেন।

চ্যাপ্টা ভাজ সেতু
গোল ভাজ সেতু
ছবি দেখিয়া এইবার নিশ্চই বুঝিয়াছেন ইহারা কিরূপ হইবে। তাহারপরেও বলা আমার কর্তব্য তাই বলিতেছি , “যেই সমস্ত সেতু তাহাদের নিচ দিয়া জলযান যাইতে দিবার উদ্দেশ্যে নিজেদেরকে ভাজ করিয়া লয় সেই সমস্ত সেতুদিগকে ভাজ করা সেতু বলা যায়।”

সাধারণ ভাবে “ভাজ করা সেতু” দিগকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। উপরের প্রথম ছবিতে দেখিতে পাইয়াছেন কি করিয়া একটি সেতুকে চ্যাপ্টা ভাবে ভাজ করি রাখা যায়। এই সমস্ত সেতুগুলিকে আমরা “চ্যাপ্টা ভাজ সেতু” বলিতে পারি।

আবার উপরের দ্বিতীয় ছবিতে আমরা দেখিতে পাইতেছি একটি সেতুকে কি করিয়া পেঁচাইয়া গোল করিয়া ভাজ করা হইতেছে। এই ধরনের সেতুদিগকে আমরা বলিবো “গোল ভাজ সেতু”।

এখন মনে প্রশ্ন জাগিতে পারে, বাস্তবে কি এই ধরনের সেতুর সত্যিই কোনো অস্তিত্ব রহিয়াছে? নাকি লেখকের উত্তপ্ত মস্তিস্কের উদ্ভট আবিস্কার। লেখকের মস্তিস্ক উত্তপ্ত হলেও “ভাজ করা সেতু” গুলির অস্তিত্ব কিন্তু সেই উত্তপ্ত মস্তিস্কে নয়। বাস্তবেও ইহাদের অস্তিত্ব রহিয়াছে। তাই বলিয়া সঞ্চয় দত্ত অভিনিত “বাস্তাব” চলচিত্রে ইহাদের খুঁজিতে যাইবেন না দয়া করিয়া। একটু অপেক্ষা করেন আমিই উহা দিগকে আপনাদের সামনে হাজির করিতেছি।

চ্যাপটা ভাজ সেতুঃ চ্যাপটা ভাজ সেতু নিজ চোক্ষে দেখিতে হইলে আপনাকে যাইতে হইবে জার্মানি। কারণ জার্মানির Kiel শহরে রহিয়াছে একখানি চ্যাপ্টা ভাজ সেতু, নাম তাহার “Hörnbrücke বা Hoernbridge”। সেতুটি যখন নিচ দিয়া নৌযান যাইবার জন্য নিজেকে গোটাইয়া লইতে থাকে তখন তাহাকে দেখিতে ইংরেজী “N” অক্ষরের মতো দেখা যায়। নৌযান চলিয়া যাইবার পরে সে আবার নিজেকে মেলিয়া ধরে পথচারী আর মটরগাড়ীর জন্য। এখনো যদি আমার কথা বিশ্বাস না হইয়া থাকে তবে নিচে ছবি দিয়া দিতেছে দেখিয়া লইবেন।

“Hörnbrücke বা Hoernbridge” নিজেকে মেলিয়া ধরা অবস্তায়।
“Hörnbrücke বা Hoernbridge” নিজেকে গোটাইয়া লইবার কালে।
গোল ভাজ সেতুঃ নিজ চর্ম চোক্ষে গোল ভাজ সেতু দেখিতে হইলে আপনাকে যাইতে হইবে লন্ডন। Grand Union Canal খারের উপরে এই অতিব চমৎকার সেতুটি তৈরি করা হইয়াচে ২০০৪ সালে। স্বাভাবিক অবস্থায় সেতুটি চুপচাপ পড়িয়া থাকিলেও তাহার নিচ দিয়া জলযান বাইবার কালে যখন সে নিজে গোটাইতে শুর করে তখন এক মনরম দৃশ্যের আর্বিভাব হয়। সেতুটি ধীরে ধীরে নিজে গোটাইয়া গোল একটি চাকার মতো করিয়া ফেলে। দর্শক তাহা দেখিয়া নয়ন স্বার্থক করেন। নয়ন স্বার্থক করিবার জন্য লন্ডন যাইতে না চাইলে নিচে ছবি দিতেছে- দেখিয়া দুধের স্বাদ ঘোলে মিটাইয়া লন, আমারই মতো।


এই রকমের আরো একটা মডেল দেখিতে পারেন।


লেখকঃ মরু ভূমির জলদস্যু।
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

২টি মন্তব্য:

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info